-ঐ মিয়া! এইখানে খাম্বার নাহান খাড়াইয়া কী দেখো?
আমাকে দেখে হক সাহেব রাগে খেঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন! আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম-
-জ্বী? কিছুই তো দেখি না।
-তাইলে মিয়া এইহানে খাড়াইয়া খাম্বা হইছো ক্যান?
কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে হল না। তবুও বললাম-
-আসলে মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিল,তাই…
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই হক সাহেব আমার দিকে আঙ্গুল উঁচু করে চিৎকার দিয়ে বললেন-
- মিয়া অহনও বাঁইচা আছো কে? গলায় দড়ি দিয়া মরতে পারো না? যাও…এইহান থাইকা!
আমি আর কিছু না বলে ঐ জায়গা থেকে সরে এলাম।
হক সাহেবের মেয়ের বিয়ে সাতদিন পরে। অথচ আজ থেকেই লাইটিং করেছে পুরো চারতলা বাড়িটা! বাসার ভীতরে সাঁজসাঁজ রব! উনি হয়ত ভেবেছে আমি সেসব কিছু দেখার জন্য দাঁড়িয়েছি! কিন্তু না। সত্যিই এই চড়া রোদে মাথাটা ঝিম করে উঠেছে। আর মাথা ঘুরবি তো ঘোর;একেবারে উনারই বাড়ির সামনে। গেইটটা খোলা ছিল। হয়ত সেই খোলা গেইটের ফাঁকা গলে অবচেতন মনেই,আমার চোখটা ভীতরে গেছে।"কতদিন কোন ধরণের আনন্দ চোখে পড়ে না!"কথাটা ভেবে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। ভদ্রলোক যে এভাবে ছুটে আসবে ভাবিনি!
"এই হক সাহাবের ছেলে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছে। অথচ কিশোর বেলায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে,ছেলেটা জুয়ার আড্ডায় যেত! এখন মাশাল্লাহ সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে! খুব ভালো!"কথাটা ভেবে একটা তৃপ্তির হাসি আমার শুষ্ক ঠোঁটে ভেসে উঠে।
কাঁপা কাঁপা পায়ে কিছুদূর হেঁটে বশীর সাহেবের বাড়ির সামনে থেমে যাই! পা দুটো যেন আর চলতে চায়ছে না! মনে পড়ে- এই বশীর সাহেবের বড় মেয়ে সীমার কথা। সেদিন ফজরের নামাজ পড়তে আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। মেয়েটাকে দেখি ওদের বাড়ির কাজের ছেলে রুস্তমের সাথে! পাখিদের ঘুম ভাঙলেও,সেই সময়ে মহল্লার কারোর ঘুম তখনও ভাঙেনি! ওরা এই সময়ে কোথায় যাচ্ছে? তাও দুজন শুধু! তখন কত বয়স হবে মেয়েটার? পনের কি ষোল? এই ভোরবেলা ওর হাঁটাচলা আর ভয়ার্ত চাউনি দেখে আমার সন্দেহ হলো! তাছাড়া অন্যদিন সে আমাকে দেখলেই বলত-"চাচা আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন?" কিন্তু সেদিন কিছু না বলে আমাকে পাঁশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে! আমি মেয়েটাকে বাঁধা দিলাম। বললাম "কই যাও মা?" সে কোন কথা বলল না। বরং রুস্তমের হাত আরও শক্ত করে ধরে রেখেছে! ছেলেটার হাতে একটা ব্যাগ! সন্দেহ আরও গভীর হল।
ওদের দুজনকে কিছুটা জোর করেই নিয়ে এনেছিম আমার বাসায়। সেদিন অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসা করেও কোন জবাব পেলাম না। শেষে আশ্বস্ত করলাম-"মা তুমি আমাকে বিশ্বাস করে সত্যটা বল। কথা দিচ্ছি আজকের এই ঘটনা কেউ জানবে না। তোমার বাবা মাও না!" শেষে সবকিছু শুনে ওকে আমি বললাম-"মাগো এখন তুমি অনেক ছোট। লেখাপড়া শেষ কর। আর যে ছেলেকে ভালবেসেছ সে ওতো কী কাজ করে তা তুমি জানো মা। এখন বাসায় যাও। সময় হলে আমি নিজেই তোমার বাবাকে বলে এই ছেলের সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব। তবে এই ছেলেকেও লেখাপড়া করতে হবে। কিরে রোস্তম-লেখাপড়া করবি তো?" ডান দিকে ঘাড় কাত করে "হ্যাঁ" সায় দেয় বিশ বাইশ বছরের রোস্তম। তারপর মেয়েটাকে ওদের বাসায় পাঠিয়ে দেই। ছেলেটাকে বলি ঐ বাসার কাজ ছেঁড়ে দিতে। বলি ওর লেখাপড়ার সব খরচ আমি দেব। ওরা দুজনেই আমার কথা শোনে। বশীর সাহেব এসব কিছুই জানে না। সেদিন আমি ভেবেছিলাম,উনি মেয়ের এসব কথা জানলে,হয়ত মরেই যাবে। মেয়েকে মারধোর করবেন।
হ্যাঁ আজ পর্যন্ত বশীর সাহেবকে কিছুই জানতে দেইনি। তবে রোস্তম আমার বাসায় পনেরদিন থেকে কিছু টাকা চুরি করে,কোথায় যেন চলে গেছে। এই নিয়ে সীমা মেয়েটার কোন কষ্ট হয়েছে কিনা আমার জানা হয়নি। মেয়েটা এমএ শেষ করেছে! বিয়েও হয়েছে বেশ বড় একজন ব্যবসায়ীর সাথে। শুনেছি বেশ সুখেই আছে। "হা হা হা মেয়েটা আমাকে দেখলেই এখনও লজ্জায় মাথা নত করে দৌড়ে পালায়!"কথাটা ভেবে বেশ হাসলাম। পথচারীরা হেঁটে যেতে যেতে আমাকে হাসতে দেখে বিরক্ত হয়। বিড়বিড় করে বলে উঠে-"পাগল একটা!"
ড্রেনের পাঁশেই বসে পড়লাম। মাথা উঁচু করে সব বাড়িগুলো চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি আর ভাবছি-এই মহল্লায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে আমাদের বসবাস। আমার বাবা গ্রাম থেকে যখন মাকে নিয়ে এই এলাকার একটা বাসায় ভাড়ায় ছিলেন। তখন এই মহল্লা ছিল একেবারেই বিল। হাঁটু পানির ভীতর বাঁশের পোতা করে,তার উপর তক্তার মেঝে। মাথার উপরে গোলপাতার একচালা ছাউনি দেয়া ঘর। পানির উপর তক্তা আর বাঁশ দিয়ে সাঁকো করে মেইন রাস্তার সাথে সংযোগ। ধীরে ধীরে যখন যুদ্ধ শুরু হল। এই এলাকা ফাঁকা হতে শুরু করলো। সে এক ভয়াবহ সময়। আমি তখন এই মফঃস্বল শহরের মডেল স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্র। আমাদের বাড়ির মালিক হরেন বাবু এই জমি বিক্রি করে ওপারে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমার আব্বা জমিটা কিনে নিলেন নিজের নামে। একদিকে জমিটা যদি কেউ দখলে নিয়ে নেয়,এই ভয়-আরেকদিকে মিলিটারি ও রাজাকারের ভয়। ভয়ে ভয়ে এই বাড়িতেই বাবা মা আমাকে আর ছোটবোনটাকে নিয়ে থেকে গেলেন।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে,এলাকা আবার জন মানুষে ভরে উঠে। বিলে মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে দালান বাড়ি। আমাদের জন্যও এই বাড়িটা হল স্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু আশে পাশে পাকা দালান হলেও,আমাদের বাড়ির কোন উন্নয়ন আব্বা করতে পারেননি। শুধু একচালা ঘরটাকে রিলিফের কয়েকটা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হল। কোন রকম খেয়ে পরে আমাদেরকে নিয়ে আব্বা মা বেঁচে রইলেন। ধীরে ধীরে আমি পড়াশুনা শেষ করে একটা কোম্পানিতে চাকরি নিলাম।সেই চাকরির বেতনের টাকা জমিয়ে মা আব্বাকে দিলেন। আব্বাকে বললেন-
-পোলা বড় হইছে। হেরে তো বিয়া শাদি দিতে হইব। আরও একটা ঘর আর ঘরের মধ্যে বাথরুম দরকার।
আব্বা মাকে বললেন-
-টাকায় তো হইব না! পোলারে কও ব্যবস্থা করতে।
-পোলায় আর কত করব!
মা আব্বাকে জানালেন কথাটা! এসব শুনে আমার মন খারাপ হয়! আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করব। আশে পাশের অনেকেই করেছে। কিন্তু আব্বাকে রাজি করানো গেলো না। তাঁর এক কথা "লোন নিয়া বাড়ি করলে সব হারাইতে হইব! আমার যা আছে,যেমনে আছে অসুবিধা নাই। যার অসুবিধা হয় সে গিয়া নিজে বাড়ি কইরা থাকুক!" আড়ালে থেকে বাবার কথাটা শুনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করার চিন্তা বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু জেদ ধরেছিলাম যেভাবেই হোক বাড়ি করব। দুই বছরের মধ্যে আমি চার বেডরুমের একটা বাড়ি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবং সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায়। তারপর ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে আমি নিজে বিয়ে করেছিলাম শিউলিকে! মা বাবা একদিন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিন্তু আমার মনের মাঝে রেখে গেলেন কিছু জেদ! আর ঐতিহ্য হিসাবে পেলাম-নিজের চারদিকের পরিবেশ ভালো রাখায় নিজের করণীয় কিছু কর্তব্য। ঠিক বাবাকে যা করতে দেখেছি।
এই ভিটে মাটি বাড়িঘর জীবন দিয়ে হলেও আমাকে রক্ষা করতে হবে। আব্বা প্রায়ই বলতেন-"নিজে ভালো থাকতে চাইলে,আগে আশে পাঁশের পরিবেশ ভালো রাখন দরকার! নিজে ভালো থাকলে আর আশেপাশের মানুষ খারাপ থাকলে,শান্তিতে থাকন যায় না!"আর তাই মহল্লার পরিবেশ ভালো রাখতে বাবা প্রতিবেশীদের সাথে মিলে মিশে যা যা করণীয় তাই করার চেষ্টা করতেন। আব্বার সাথে সাথে থেকে দেখেছি-প্রতি জুম্মার নামাজের দিন মহল্লার মুরুব্বিদের নিয়ে আব্বা আলোচনা করতেন। মহল্লায় কোন বখাটে ছেলে থাকলে,তার সম্পর্কে সবাই মিলে ভালো কোন সিদ্ধান্ত নিতেন। অনেক সময় দেখা যেত যার সন্তান খারাপ পথে যাচ্ছে, বা খারাপ কাজ করছে? সে নিজে কিছুই জানতে পারতো না। অথচ আশে পাশের সবার নজরে ঐ খারাপ ছেলের কার্যকলাপ ধরা পড়তো। প্রতিবেশীরা মিলে ঐ বখাটে ছেলে সম্পর্কে তার বাবাকে জানাতো। দেখা যেত ছেলেটা অনেক বেশি খারাপ পথে যাবার আগেই,ওর বাবা মা ওকে মামা বাড়ি অথবা কোন আত্মীয়র বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। খারাপ সঙ্গ ছুটে যাওয়ায় ছেলেটা বাধ্য হয়েছে আবার ভালো পথে আসতে। এভাবেই একদিন ছেলেটা খারাপ পথ ছেড়ে ভালো পথে আসতে বাধ্য হত।
কিন্তু সমস্যা হয়েছে আমার ছেলে আসীরের বেলায়। রীতিমত আকিকা দিয়ে "আসীর"নামটা ওর দাদা রেখেছিলেন। যার অর্থ হল "সম্মানিত"। কিন্তু আমার সেই সম্মানিত ছেলে আমার সম্মানকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে! আমাকে পথে নামিয়ে ভিখারি করে ছেড়েছে! যে আমি অন্যের ছেলের চিন্তায়,তাদের বাবাকে নানা ধরণের ভালো পরামর্শ দিয়ে এসেছি। সেই আমার ছেলে কখন যে স্কুলের ছেলেদের সাথে মিশে খারাপ পথে গেছে,নেশা করেছে-তার কিছুই আমি ধরতে পারিনি! আমাকে কেউ কোনদিন কিছু বলেওনি! তার মানে এই না কারো নজরে আসীরের খারাপ অভ্যাসগুলো নজরে আসেনি। অবশ্যই এসেছে। তারপরও কেউ আমাকে একবার জানাবার প্রয়োজন মনে করেনি। তাদের সন্তান ভালো আছে। এই তৃপ্তি নিয়ে তারা সবাই থেকেছে!
আমি যখন আসীরের ব্যাপারে শিওর হলাম যে,সে মাদকে আসক্ত? তখন ওকে রিহ্যাবে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। দোষ আসলে আমার। আমি সমাজের উন্নয়নে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে,নিজের ঘরের উন্নয়নে সময় দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার ছেলে যখন আমাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চাইত,ওকে আমি সময় না দিয়ে 'যাও পড়তে বস!' বলে ধমক দিয়েছি! যখন আমাকে নিয়ে মাঠে খেলতে যেতে ছেয়েছে 'বাইরে যেতে হবে না। যাও ঘরে গিয়ে খেলা কর।' এসব কথা বলে ওকে বাড়িতে বন্দি করেছি। সিনেমা,থিয়েটার দেখতে চাইলে,বন্ধুদের সাথে খেতে যেতে চাইলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছি। অথচ ওর মার কাছে কেঁদে কেটে ঠিকই আমার অগোচরে চলে গেছে। মায়ের মন সন্তানের সামান্য আনন্দ দিতে ওর হাতে কিছু টাকা দিয়ে তৃপ্তি খুঁজে নিয়েছে। আমি নিজে ওকে কোথাও নিয়ে যাইনি। ছেলে জুম্মার নামাজে গেছে আমার সাথে। ছোট বেলায় নিয়ম করে নামাজ পড়লেও,অভ্যাসটা যে কখন ওর ছুটে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। আমার বিশ্বাস ছিল ওর বাপ দাদা কেউ খারাপ নই! সুতরাং আমার সন্তান কোন দিন খারাপ হবে না। আমি আসলে সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম।
ছেলেকে রিহ্যাবে দিতেই মহল্লায় বিষয়টি একেবারেই জানাজানি হয়ে যায়। লজ্জায় আমি ঘরের মাঝে মুখ লুকিয়ে রাখি। তারপর একদিন আসীর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু মহল্লার সবাই ওকে "দূরছাই দূরছাই!" করতে থাকে। 'বাবা তুমি কারো কোন টিপ্পনীতে কান দিও না। তুমি লেখাপড়াটা আবার শুরু কর।'ছেলের সাথে থেকে ওকে বুঝাই। কিন্তু কতক্ষণ? মহল্লার কেউ ওর সাথে মেলামেশা করে না। ওর বয়সী ছেলেমেয়ে,ওর থেকে বয়সে ছোট এবং বয়স্করাও ওকে দেখলে উল্টো পথে হেঁটে যায়। বাসায় এসে ছেলে আমার ভীষণ কান্নাকাটি করে। তারপর একদিন আবার সে নেশায় ডুবে যায়। ঘরে খুব একটা আসে না। কোথায় কাদের সাথে থাকে কিছুই আমি আর জানতে পারি না। ধীরে ধীরে আমি এবং ওর মা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তারপর প্রায় বছর খানেক পর ছেলে আবার ঘরে আসে। দীর্ঘ চুল দাড়িতে ঢাকা রুগ্ন শুষ্ক মুখ! স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে! গাইয়ের রং একেবারে পোড়া তামাটে! কয়েকদিন সারাদিন ঘরে থাকে। আর রাত হলে বের হয়! কারো সাথে কথা বলে না। কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না! বাথরুমে যেয়ে বসে থাকে! না হলে নিজের ঘরের দরজা দিয়ে ভীতরে থাকে! ওর মায়ের কথা"থাক ওরে কিছু কইয়েন না! ছেলে ঘরে আছে এইটা দেইখা দুনিয়া ছাড়তে চাই!" আসলে আমারও সেই আগের মত রাগ,জোর গলায় কথা ধমকে কথা বলার শক্তি নেই। দুই কথার মাঝে কুড়িটা দেই কাশি! তাই আর কিছুই বলি না। দুইটা রুম ভাড়া দিছি সেই টাকা আর পেনশনের টাকায় নুনভাত খাই! ছেলের ঘরে ফেরার উদ্দেশ্য বুঝতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি!
একদিন কিছু গুন্ডা মার্কা লোক এসে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে বাসা থেকে বের করে দেয়! আসীর নাকি তাদের কাছে আমার এই বাড়িটা বিক্রি করে টাকা নিয়েছে! বাড়ির দলিল,খাজনার রশিদ, ট্যাক্স রশিদ কোন কিছুই আর খুঁজে পেলাম না। ছেলে কখন যে সব হাতিয়ে নিয়েছে,একটুও টের পাইনি! থাকা কোটকাছারি করার মত অর্থ,শক্তি কোনটাই নেই। মেয়েটাও স্বামী সংসার নিয়ে ঝামেলায় আছে। সে বহুদিন ধরে আমাদের খবরও নেয় না। শুনেছি ওর স্বামী ওকে ধরে মারধোর করে। ওর স্বামী নাকি আমার পরিচয় দিতেও লজ্জা বোধ করে। আমিও রাগে মেয়েকে বলে দিয়েছিলাম"ঠিক আছে জন্মদাতা বাপ মায়ের পরিচয়ের জন্য যদি তোমার অশান্তি হয়? তাইলে আর পরিচয় দিও না! ধইরা নেও তোমার বাপ মা মইরা গেছে!" মেয়েটা তারপর থেকে কোনদিন আর খবর করেনি! ও সুখে থাকলে আমরা সুখী! কোথাও যাবার পথ নেই!
অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে নেমে এলাম রাস্তায়। আমার স্ত্রী সারা জীবন সংসারের ঝড় বৃষ্টি সামাল দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সত্যিকারের ঝড় বৃষ্টির কাছে হার মেনে নিয়েছেন। এই এলাকা,এই মহল্লা ছেড়ে ওকে নিয়ে অচেনা অজানা কোথাও যেতে সাহস হল না। পাশেই একটা নতুন বড় বিল্ডিং এর কাজ হচ্ছিল। স্ত্রীকে নিয়ে ওখানে সিঁড়ির নীচে কাপড়ের ঘেরা দিয়ে থাকতে লাগলাম। ছেলের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ করতেও যে টাকা লাগে! লাগে শরীরে শক্তি। হাতে টাকা নেই। ওষুধ পথ্য কিছুই নেই। বুড়িটা কেমন যেন ওম দেয়া মুরগির মত জড়সড় হয়ে ঝিমুনি দেয়! আমার বুকটা খালি খালি লাগে। আমার হাত ধরে কঙ্কাল দেহটা পড়ে থাকে। তারপর রাতের অন্ধকারকে গিলে খেয়ে সূর্য উঠে ঠিকই,কিন্তু আমার প্রিয়তমা ঘুম থেকে আর উঠলো না। সে-ও দুই তিন বছর হয়ে গেছে।
এখন শূন্যতাকে সঙ্গী করে নিদ্রাহীন আমি,কুঁজো হয়ে হেঁটে বেড়াই। রাত গভীরে শকুনের দেখা পাই নানা অলিগলিতে। সদ্য ফোঁটা ফুল,অথবা ছোট্ট কুঁড়ি-ছিঁড়ে ফুঁড়ে খায়,লালসা মেটায়। অন্ধকার ভেদ করে পেঁচার চিৎকার ভেসে আসে। আমি ছুটে ছুটে এ দরজা থেকে ও দরজায় কড়া নেড়ে যাই। বাকরুদ্ধ আমি ভেসে যাই বোবা কান্নায়। কেউ আমাকে আর বিশ্বাস করে না। সন্তানের পাপে প্রায়শ্চিত্ত করি,পাই সবার ধিক্কার। অথচ এই আমি জানি এই জীবনের ভুলগুলোর পাঠ আমাকে কী পড়িয়েছে। উলের কুরুসে উল বুনে বুনে চাদর বানিয়ে ওম দিয়ে যে মানুষগুলোকে কঠিন তুষার ঝড় থেকে বাঁচতে সাবধান করেছি? সেই তারাই এখন আমায় প্রতিনিয়ত অভিশাপ দেয়। সমাজের আবর্জনা ভেবে দূরছাই করে তাড়িয়ে দেয়। "পাগল! উম্মাদ" বলে বলে আমাকে আত্মহত্যার পথ দেখায়।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একজন মানুষ,যে সারা জীবন তার বাবার দেখানো আলোর পথে হেঁটে গেছে! আশেপাশের সবার মঙ্গল কামনায় তাদের কষ্ট বেদনাকে আপন করে সমাধান খুঁজে দিয়েছে! সেই মানুষটা একদিন নিজের সন্তানকেই অন্ধকার পথে পেয়েছে। এই মানুষটার কল্যাণের কথা,তার মনের ব্যথা,কেউ কোনদিন বুঝতেও চেষ্টা করেনি! সবার সুখ শান্তি দেখে খুশির পরিবর্তে এই মানুষটার এখন "মন ভেঙ্গে" যায়। "আমার জন্য কারো কাছে কী একটুও সহমর্মিতা নেই? মানুষ এতোটা স্বার্থের খেলায় কীভাবে মেতে উঠে?"এই ভাবনায় মন ভেঙ্গে দেয় মনের মাঝে তোলপাড় করা সমুদ্রের ঢেউ।
২৭ মে - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২০ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৬
বিচারক স্কোরঃ ২.৮ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ১.৮ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪